Posts

ভুবনেশ্বর মন্ডল

দৃশ্যেরা হাঁটছে অসীমে ভুবনেশ্বর মন্ডল দৃশ্যেরা দ্রুততম হাঁটছে অসীমে এই জনপদ হাট বাজার সংসার চলেছে হেঁটে নিজেদের মতো কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই মায়া নেই যেন চলমান এক মহানগর উজানের স্রোত ভেঙে উৎসে ফেরা অসম্ভব নিয়তি আমরা কেউ ফিরি না কোনদিন আসলে ফেরা যায় না ফেরা বলে কিছু নেই যেটুকু ফিরি সে কেবল ছলনা শিল্পের মায়ালোক সরল আদিম জটিল আবর্তে বহুকোষী দৃশ্যেরা পেরিয়ে যায় গ্যালাক্সি অন্য সৌরলোক নস্টালজিয়া তো প্রেতের শ্মশান দৃশ্যেরা হাঁটছে অসীমে আমরা নিত্য জায়মান ।

মধুকৃষ্ণা চক্রবর্তী

বৃষ্টিপাতায় জমিয়ে রাখি ছায়া মধুকৃষ্ণা চক্রবর্তী আজ মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থাকুক সারাদিন। ভাদ্রের ছাতিম পাতায় লেগে থাকুক শ্রাবণ জলের বাদল গান । উড়ে যাক ময়দানের সবুজ ঘাসের যত রঙিন ছাতা। শহর ক্রমশ উন্মাদ হতে থাকুক সরোদ বাদকের তুমুল ধ্বনিতে। ঠিক তখনই আকাশ নদী অন্ধকার করে নেমে আসবে তোলপাড় করা বৃষ্টি। এইসব চলন্ত দৃশ্যের সাথে আমরা হাতে হাত রাখবো পরস্পরের। দড়ি ছেঁড়া নৌকার মতো ভাসতে থাকা আমাদের জীবন ছুঁয়ে থাকবে সেই উষ্ণতা !

জুয়েল মাজহার

কালো জড়ুলের লোভ জুয়েল মাজহার চাকাটি গড়িয়ে গেল, ডুবে গেল থিকথিকে পাঁকে তবু, শরীরের আগুন নেভাতে হামামখানার দিকে পাগল ঋতুর যান ছোটে টালির ছাদ আর ঝকমকে টিনের চালে অশেষ অব্যয়সহ, স্ত্রী-পরাগসহ এসে বসল ময়ূর কালো-জড়ুল-আঁকা তোমার বাম স্তন থেকে শ্বেত কেতুরের মতো স্ফটিকের দানা ঝরছে আর, তবলার মতো নিজে থেকেই বেজে চলেছে রাত্রি আয়না থেকে দৃশ্যটি পিছলে, গড়িয়ে গেল রাত্রির অরূপ কুহরে স্নায়ুপথে অখিল স্পন্দন আর, ওম শান্তি, ঘুমের সাঁতার! গাগরি ভরার ছলে গোপন ঝোরার পথে নেমে স্নায়ুবন ঢুঁড়ে তুমি পবিত্র-পাপের-ফুল খোঁপায় পরেছ অশেষ স্নানের শব্দ, মৃদু কেকারব... এবার দু-জনে চলো ঢুকে পড়ি হামামখানায়    বাঘিনিকে সোনার বাঘিনি, খোলো শয়নকুঠুরি দাও সহজ প্রবেশ তোমার চির-অভিযোজক, আশ্রয়ণীয় যোনির স্বেদ ও শিশির থেকে তুমি কাউকে বঞ্চিত কোরো না অভ্রমে পড়া, অনভিজ্ঞ তরুণ বাঘের জন্য রেখো কিছু রতি-স্বস্ত্যয়ন বাঘটির জন্য তুমি অবারিত করে দাও শয়নকুঠুরি, দয়াশীলা! কেননা, প্রতিসাম্যে জ্বলমান তোমার বিখ্যাত যোনি প্রত

গোলাম কিবরিয়া পিনু

জামাটা   গোলাম কিবরিয়া পিনু যে জামাটা রোদ ও তাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখল. সম্ভ্রমও দিল, সেই জামাটা পুরনো হয়ে ছিঁড়ে গেল! তাকে আর আলমারি, ওয়ারড্রব ও আলনায় রাখতে পারিনি! কিছু কিছু জামার কথাও বেশ মনে পড়ে যায়--মাঝে মাঝে, সে-সব জামার কতকটা ছিল আরামদায়ক, রঙ ও রুচিতে অনন্য, কোথা থেকে--কোন্ মার্কেট থেকে কিনেছিলাম, তাও মনে পড়ে যায়! জাদুকরের জামাও পরিনি, দৌড়বাজির জামাও! শান্তিপুরে তৈরি উৎকৃষ্ট তাঁতের কাপড়ের জামাও পরতে পারিনি! এমন কোনো জামা পরে নাচদুয়ারে উপস্থিত হইনি নাচনেওয়ালা স্বাগত জানাবে! তবে জামার জন্য বেশি মাত্রায় কখনো কাঙাল হইনি জানি, কাঙাল হলে কঙ্কাল হয়ে যেতে পারি, তখন আর বোধ ও প্রতিবোধ কিছুই থাকবে না! জামা ছাড়া তো ভদ্রসমাজে বের হওয়া যায় না, আমি এখন নতুন একটা জামা কিনতে যাচ্ছি! আমার মনের মতো, অন্তত বোধ থাকতে থাকতে! হৃদয়গ্রন্থি নদীকে বলেছি-‘নদী বড় হও’। নদী বলে--‘আমি জল ছাড়া বড় হই না যত জল তত বড়’। মানুষ কি একা বড় হয়? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে--নদী আরও বলে জলছাড়া আমি অবলুপ্ত হই

রোকেয়া ইসলাম

এপিটাফে নিবেদিতা রোকেয়া ইসলাম নিবেদিতা অন্তরালে অব্যক্ত জাতিস্মর আকন্ঠ ডুবে যাই অগাধ জলে শ্রাবণ ধারাপাত আকাশের স্বপ্নজ্বর মেঘলোকে শুনিয়েছিলে জোছনার নামতা.. চোখ রাখি জীবনের অসমাপ্ত কাব্যে দীর্ঘকাল মহুয়া মাতাল আজন্ম পাঠে সেই চেনাজানা মানুষের গল্প গোধুলির গায়ে ছিল না আমন্ত্রণ লিপি তবুও বাড়িয়ে থাকি পা, সহস্রাধিক প্রাণের অন্ধ বাতাস কাঁদে শুনেছো নিবেদিতা? ধ্বনি মেঘ হয়,বাতাস আর কুয়াশায় দূর প্রাঙ্গণে ভাষা বৃক্ষে নবীন পাতার ঘ্রাণে তৃষ্ণার্ত বৃষ্টি অনিন্দ্য মুদ্রণ ঠোঁটে ভেসে যায় -স্বপ্ন নদী তটে সাত সমুদ্রের অজস্র পথরেখা আইরিশ জল রঙে নিবেদিতার বিষন্ন দৃষ্টি.... জলের উপর আলোর প্রক্ষেপণ -তুমি নিবেদিতা চিত্রকলায় শুদ্ধ বিলাবল সঙ্গীতে গৌড়ীয় সাহিত্য মাটিগন্ধা ফাগুন মেঘ সিক্ত আকাশ ডেকে যায় মনের গহীনে কি নাম? কি পরিচয়?বাগবাজার ফিরিঙ্গি দুহিতা... এসো গোলাপ ফোঁটাই ভারতবর্ষের এককোণে-এই শহর কলকাতায় এ যেন গত জন্মের বাস স্পর্শে বিজরিত পথচলা যতটুকু ছিল আত্মায়, ঢেলে দিলে ততোধিক নিবেদিতার দীর্ঘশ্বাস.... গঙ্গাজলে ধুয়ে গেছে সাবেকি কিছু অভিমান হ্যালোজেন বাতিতে ভোর নেমে আসে--প্রতিজ্ঞা ধর্মোপসনা ত্রিভুবন এফোড় ওফোড়

রফিকুর রশীদ

সমুখে শান্তিপারাবার  র ফি কু র র শী দ কে জানত যে বিয়ে হবার পর বছর খানেক না পেরোতেই রানী এমন কঠিন অসুখে পড়বে! কঠিন অসুখ বই কি ! ডাক্তার-কবরেজ ঠিকমতো ধরতেই পারে না --- অসুখটা কী। কাশতে কাশতে শুকনো কফের সঙ্গে একদিন সামান্য লাল আভা দেখে বুড়ো কবরেজ চিন্তিত মুখে জানালেন, লক্ষণ ভালো মনে হচ্ছে না। এ যে দেখছি গলক্ষত!   পরিবারের সকলেই চিন্তিত। রানীর স্বামী সত্যেন্দ্রনাথও ডাক্তার। অ্যালোপ্যাথির এলএমএফ পাস। এ সময়ে তার একটা পরামর্শ পেলেও সবার জন্যে স্বস্তির হতো। কিন্তু তাকে কি হাতের কাছে পাবার জো আছে! সে আছে সুদূর আমেরিকায়। হোমিওপ্যাথির উঁচু ডিগ্রি করছে। এই তো ক'মাস আগে মৃত্যুপথযাত্রী শাশুড়ির পীড়াপীড়িতে দেশে এসে বেড়িয়ে গেল। আবার এত ঘনঘন দেশে আসা যায়! হ্যাঁ, তখন রানীর অসুখ ছিল না। বরং চোখেমুখে ছিল অচেনা শিহরণ, অজানা সুখউচ্ছ্বাস। সে উচ্ছ্বাস কী করে যে ব্যক্ত করতে হয় আর কী করে যে ঢাকতে হয়, সেই ছলাকলার কিছুই জানে না সে। জানবে কী করে--- সেই সুযোগ পেলে তো! ওদের শৈশব কেটেছে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে, অনেক ছেলেমেয়ের মধ্যে, কিন্তু কড়া শাসনে। আবার গত তিন বছর একটানা কাটিয়েছে শিলাইদহের মতো নিভ

পলাশ দাশ

সাঁওতালি গাঁও তোমাকে দিতে যদি না পারি... হীরার অঙ্গুরীয় স্বর্ণকাতান কাশ্মীরীয় জামদানী, অথবা পৃথিবীর কোন প্রিন্সেসের মতো পোশাক দামী দামী, তবু বাংলার সোনালী আঁশে বোনা আমার তাঁতি হাতের নিরন্তর শুভেচ্ছা অপার ভালোবাসা নাও। বুকের কাছে জোহান্সবার্গ নয় গড়তে পারি.. কোন এক সাঁওতালি গাঁও, ভালোবাসার নামে শাড়ির আঁচলের মতো মেঠোপথে হারাবো তুমি আর আমি । স্পেনিস মিউজিক নয় পাখিরাও নয় খুব নির্জনে কখনও গেয়ে উঠবো গান উদাস সুরে আমরা দুজনে। অক্সিজেন ঘন সবুজ এক ছায়াবৃতের মধ্যে আমি ভালোবেসে ---- কৃষ্ণছূড়ার রঙে জ্বলে উঠেছিলাম। আমার ভিতর আগুন ছিলো বলেই তো আমাকে জ্বালাতে পেরেছিলে, আমার ভিতর প্রাণ ছিলো বলেই তো তীব্র ভাবে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলে, আমি প্রেমহীন নই বলেই তো হৃদয়ের শুকনো গাছের মরা ডালও পল্লবিত হয় সহজে। অক্সিজেন ছাড়া কোন প্রাণীর পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়, কিন্তু অবাক করে আমি সারাটাজীবন বেঁচেই আছি! তবে তোমাকে ছাড়া ঠিক আগের মতো জ্বলে উঠতে পারিনা। তীব্র তৃষ্ণায়  দূরাকাশও স্রোতস্বিনী নদীর কাছে এসে যখন পান করে জলধারা, তীব্র তৃষ্ণায়, মনেহয় এ যেন, রাজা দ্বি রাজ ভিখারি বেশে অতৃপ্ত হৃদয়ে কোন প্রেম ভিক্ষা চাই! সে আকাশে