গোলাম কিবরিয়া পিনু
জামাটা
গোলাম কিবরিয়া পিনু
যে জামাটা রোদ ও তাপ থেকে
বাঁচিয়ে রাখল.
সম্ভ্রমও দিল,
সেই জামাটা পুরনো হয়ে ছিঁড়ে গেল!
তাকে আর আলমারি, ওয়ারড্রব ও আলনায়
রাখতে পারিনি!
কিছু কিছু জামার কথাও
বেশ মনে পড়ে যায়--মাঝে মাঝে,
সে-সব জামার কতকটা ছিল আরামদায়ক,
রঙ ও রুচিতে অনন্য,
কোথা থেকে--কোন্ মার্কেট থেকে কিনেছিলাম,
তাও মনে পড়ে যায়!
জাদুকরের জামাও পরিনি,
দৌড়বাজির জামাও!
শান্তিপুরে তৈরি উৎকৃষ্ট তাঁতের কাপড়ের
জামাও পরতে পারিনি!
এমন কোনো জামা পরে নাচদুয়ারে উপস্থিত হইনি
নাচনেওয়ালা স্বাগত জানাবে!
তবে জামার জন্য বেশি মাত্রায় কখনো কাঙাল হইনি
জানি, কাঙাল হলে কঙ্কাল হয়ে যেতে পারি,
তখন আর বোধ ও প্রতিবোধ কিছুই থাকবে না!
জামা ছাড়া তো ভদ্রসমাজে বের হওয়া যায় না,
আমি এখন নতুন একটা জামা কিনতে যাচ্ছি!
আমার মনের মতো,
অন্তত বোধ থাকতে থাকতে!
হৃদয়গ্রন্থি
নদীকে বলেছি-‘নদী বড় হও’।
নদী বলে--‘আমি জল ছাড়া বড় হই না
যত জল তত বড়’।
মানুষ কি একা বড় হয়?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে--নদী আরও বলে
জলছাড়া আমি অবলুপ্ত হই
বাতিলও হই
বিনাশও হই
কুলরক্ষা হয় না।
কালগ্রাসে পড়ে কালসমুদ্রে হারিয়ে যায় কত নদী!
তালপুকুর ও খালবিলও জল দিয়েছে-
আমি প্রফুল্ল হয়েছি,
ঝরনার জল পেয়ে ঝরঝরে
আকাশভাঙা বৃষ্টির জলে চনমনে
প্লাবনের জলে তাজা
ভূগর্ভস্থ জলে টলটলে।
জলই উচ্চতা বাড়ায়-জলই গভীরতা বাড়ায়!
একটা পোড়োবাড়ি থেকে জলগ্রন্থি খুলে
যেন প্রসারিত হয়েছিলাম--
তারপর মরুপথে
গিরিপথে
বনের ভেতর দিয়ে
জলের সাহচর্যে কুণ্ঠাহীনভাবে আমি প্রবহমান।
জলের কপটতা নেই-জলের কুম্ভীরাশ্রু নেই!
আমি শুধু এইটুকু জানি-
জলের উদারতায় উদারপ্রকৃতি হয়ে উঠি
ঊর্মিমুখর হয়ে উঠি
কল্লোলিত হয়ে উঠি
হৃদয়গ্রন্থি খুলে ধরেছি আমিও!
পাতিল
পাতিল বাতিল করার সময় হয়েছে এখন
তারপরও বাতিল করছো না কেন?
এ পাতিলে তরকারি পুড়ে যায়
সিদ্ধ হয় না আলু--
জ্বাল দেওয়া যায় না দুধ
এমন কি পানি ফুটানো যায় না
জল-তেল মিলমেশ করে রাখা যায় না!
এর এনামেল নষ্ট হয়ে গেছে--
মরচে ধরেছে
সে এখন তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না!
সে এখন তাপশক্তি সহ্য করতে পারে না!
এলুমিনিয়ামের পাতিল
লৌহমিশ্রিত পাতিল
ইস্পাতমিশ্রিত পাতিল
রূপোর পাতিল
এমন কি সোনার পাতিল
সে-ও বাতিল হয়ে যেতে পারে-
যদি তা দিয়ে তাপানো না যায়
যদি তা দিয়ে তাতানো না যায়
যদি তা দিয়ে ভাপানো না যায়
রসুইঘরে এ পাতিল রেখে কার কী লাভ?
Post a Comment