আতাউল হক সিদ্দিকী
কুহেলি
আতাউল হক সিদ্দিকী
দিন আসে দিন যায়, প্রতিদিন স্রেচ্ছ গদ্যময়-
হঠাৎ কুহেলি এলো কবিতার তন্বী বিশেষণ,
নগ্ননদী শয্যা দিল, লুব্ধ গ্রাম মুগ্ধ উপবন।
কুহেলিকা কাছে এলো, অভিসারিকার মতো ভয়,
আঁচলে জলের কণা, নীল চোখ, সমুদ্র হৃদয়;
স্নিগ্ধ হাতে দিল নষ্ট নিসর্গের মায়াবী গড়ন।
মন্থর শীতল ভোর গাঢ় শীতে নেয়েছে তখন,
অপলক গৃহবাসী, পথ ভোলে কঠোর সময়।
জীবনের দিনলিপি বর্ণহীন, নিভৃতে অলকা
স্বপ্নের শিয়রে কাঁদে, পূর্বমেঘে নিবিড় বিশ্রাম।
বসন্ত বা অভিসার প্রবঞ্চনাভরে হাসে, বাঁকা
ঠোঁটে কঠিন বিদ্রুপ। পাণ্ডুবর্ণ পোস্টকার্ড খাম-
ষড়ঋতু আসে যায়, ফেরে না সেদিন পলাতকা;
কেবল শীতের ভোরে কুহেলিকা লিখে রাখে নাম।
অরণ্যের ক্রন্দন
মষড়ের শালবনে মানুষের শব্দ কানে যেতে
আট-নটা যুবা শাল মুখোমুখি দাঁড়াল উদোম,
আমি বেশ লজ্জা পেয়ে মৃদু গলাখাকারি দিলুম;
সঙ্গীসব হরিয়াল হাতে ওঠে হৈহুল্লোড়ে মেতে।
ছিন্নমুণ্ড শালগুড়ি বার্তা দিলে গোপন সঙ্কেত
সাঁওতালি মাদলের ধ্বনি দূরে সহসা নিঝুম;
পাঁচ-ছটা বনবিড়ালের সঙ্গে ছুটে গেল ঘুম
ফেলে কটা গর্ভবতী সজারু ও উদ ধান ক্ষেতে
‘হানহান্তে’১ । সন্ধ্যা এলো, অবণ্যের গুটিয়ে আসর
আকাশ বিছানো মাঠে জমা হলো প্রস্তুত জ্বালানি;
আমাদের হাতে দিয়ে শালপাতে ঝাঁঝালো পচানি
ত্বরিত বাতাস উঠে বেহালায় টেনে দিল ছড়-
শালবনে হাহাস্বর, ডেকে গেল বিপন্ন ডাহুক;
ঘুকশির খাড়ি শোকে ঘোলা জলে ভিজালো চিবুক।
১. দিক বা অবস্থান নির্দেশক সাঁওতালি শব্দ।
বাংলা অনুবাদ- ওই যে ওই দিকে। আ.হ.সি.
Post a Comment