তানজিলা রেজা
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
তানজিলা রেজা - পাবলো ফেলিক্স জিমেনেজ
কাব্যিক দ্বৈততা - রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা আলোচনার ক্ষেত্রে একটি জরুরি উপাত্ত।
২০২৪ সালে কণ্ঠস্বর প্রকাশনী
থেকে প্রকাশিত- একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আমার বিবেচনা উপস্থাপন করছি।এই গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতার অনুবাদ আমি পড়েছি আশরাফ চৌধুরীর ইংরেজি অনুবাদে।রেজাউদ্দিন স্টালিনের এই গ্রন্থের ছোট্ট মুখবন্ধটি আমার লেখা।আমি আর্জেন্টিনার একজন শিক্ষক। তবে নিজেকে সাহিত্যের একজন ছাত্র মনে করি।রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতার সাথে আমার পরিচয় ঘটে আল আজহার পত্রিকার মাধ্যমে।পরে ফেস বুকে।
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে- গ্রন্থের নামাকরণে একটা আশাবাদীতার কথা এবং সুদূরপ্রসারী অপেক্ষমাণতা। কিন্তু জীবনবাদী কবিরা এরচেয়ে আর কোন দার্শনিক সত্যে উপনীত হবেন। পাবলো নেরুদা,রুবেন দারিও,মিরোশ্লাভ হলুব,মায়াকোভস্কি,নাজিম হিকমত, মাহমুদ দারবিশ,হান্স মাগনুস এর মতো বিশ শতকের বিপ্লবী কবিদের ধারাক্রম আছে তার মধ্যে।কিন্তু এক সতন্ত্র সত্তা। আমরা অবশ্য স্মরণ করবো হোর্হে লুইস বোর্হেসের উক্তি-
যে কোনো ভাষার বিমূর্ততাকে বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন গভীর সাঙ্গীতিক বোধ আর গীতিময়তা নবায়নের ক্ষমতা।একথা বলেছেন গিয়ম এপোলিনেয়রও। আমিও এই শর্তের স্মরণ নেবো।
রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা নিয়ে কথা বলার জন্য যে প্রজ্ঞা প্রয়োজন তা অর্জন করা কাব্যবোদ্ধাদের নতুন প্রকল্প হতে পারে।এবং তা অবশ্যই বিশ্ব কবিতার পাঠকের সাথে আমাদের বোধকে সংযুক্ত করে।যেখানে রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতার অভ্যন্তরীণ দ্বৈততা একটি কেন্দ্রীয় থিম হিসাবে উপস্থাপিত এবং যা একটি নিজস্ব ভাষাভঙ্গির নবায়ন।মানবিক মূল্যবোধের উত্থান অন্বেষণের জন্য রেজাউদ্দিন স্টালিনের বিষয় ও বিষয়ীর ঘনিষ্ঠতা আমাদের বিস্মিত করে।তার ঐতিহ্য ও পুরাণের সংযুক্তি আমাদের বিকল্প পথের সন্ধান দেয়। নিয়ম মেনে চলার মধ্যে যে বিনয় ও প্রথাগত ভাবনা তার বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদ আমাদের অনুভবের জগতকে নতুন মাত্রায় বিভূষিত করে।উদাহরণে যাবো কয়েকটি লাইন-
" তোমার উচিত প্রশ্নের বজ্র দিয়ে ঘরের স্তম্ভ তৈরি করা/এবং শিলাবৃষ্টির কাছ থেকে একটা অস্ত্রের লাইসেন্স নেয়া/ যেনো উত্তর না পেলে তুৃমি গুলি করতে পারো।"-(প্রশ্ন করা উচিত)।
এই কাব্যিক ইজমের ঐক্যের মধ্যে যে দ্বিধাবিভক্তি এবং বিদ্রোহ তা দূর করতে নবতর উৎপ্রেক্ষা যেমন দরকার তেমনি প্রতীক ও পৌরাণিক চরিত্রের নবায়ন ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার প্রয়োজন।রেজাউদ্দিন স্টালিন চিন্তনচক্র হিসাবে মৃত্যু এবং পুনরুত্থানকে ধ্রুবক বিবেচনা করেন। যুদ্ধের প্রতীকচিত্র পরাবাস্তব এবং প্রতীকী উপাদান বিনির্মানে তিনি
পারঙ্গম।তাঁর কবিতার বাকপরিমিতি,শব্দ ব্যবহারের মিতব্যয়িতা,আবেগের সংযম,বিষয় বিন্যাস আমাদের বিশ্ব কবিতার কাছে নিয়ে যায়।
আমরা বিশশতকের রুবেন দারিও,পাবলো নেরুদা, নিকোরার পাররার সাথে আদর্শিক জায়গায় রেজাউদ্দিন স্টালিনকে ভাবতে পারি।
তিনি বাংলাভাষার কবি হয়েও আমাদের বোধে বিশ্বজনিন। তিনি তার সময়ে বাস করেন এবং আগামী শতকের স্বপ্ন বয়ন করেন।আরেকটি কবিতা উদ্ধৃত করে শেষ করবো- কবিতার নাম -পারদের পৃথিবী।
"বাজপাখির ডিমে পারদ ভরে মুখে রাখলে মানুষ উড়তে পারে/
মানুষ পাখির প্রতিদ্বন্দ্বী /তার চোখের মধ্যে দুটো বিমান/কানের ভেতর ক্ষেপণাস্ত্র /মুখের গর্তে বারুদের বস্তা।"
এই লাইনগুলো প্রমাণ করে রেজাউদ্দিন স্টালিন কবিতার নতুন পেন্টালজি তৈরিতে তৎপর। জাউদ্দিন স্টালিন বিশ্বাস করেন কবিতা এক অবিনাশী শক্তি। অভিবাসী ফরাসি কবি লিণ্ডা মারিয়া বারোসের মতো রেজাউদ্দিন স্টালিন বিশ্বাস করেন-যদি না চায় তাদের চোখে সিসা ঢেলা দেয়া হোক,চোখ সেলাই করে দেয়া হোক,মুখ ঝালাই করে দেয়া হোক তবে কবিতাকে রাখতে হবে সর্বাগ্রে।
রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবি বিশ্বের অনেক পাঠকের এখন প্রিয়।অনুবাদ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ভাষায়।যদিও কবির কাছে মাতৃভাষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভাষা নেই।
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে গ্রন্থের বহুল প্রচার কামনা করি। প্রচ্ছদটিও নান্দনিক একেঁছেন মোস্তাফিজ কারগর।
লেখকঃ
পাবলো ফেলিক্স জিমেনেজ
Pablo Felix Jimenez
আর্জেন্টিনা
বাংলারূপ- তানজিলা রেজা,লন্ডন।
Post a Comment