DEHLIJ

আলম তৌহিদ

বোধের আগুন

আলম তৌহিদ





বোধের আগুনে জ্বলে শব্দের সলতে
নি:সঙ্গ যামিনী কবিকে দেয় সৃষ্টিসুখ।
`সব্বে সত্তা সুখীতা’-অসার পাঠ শেষে
মুদিত চোখে দেখি চারপাশে-
অসুখি মানুষের কাফেলা।

করতলে অন্ধকার তুলে নিয়ে পান করি সুখশরাব,
নিত্য ভেঙ্গে ভাবের পুতুল
অত:পর বস্তুর রূপে-রঙে নিজেকে ফিরে পাওয়া।

বিশ্বাসের দর্পণ মুহূর্তে ভাঙ্গে নিরাকার ছবি,
স্রষ্টার শিশ্ন খোঁজে গণিকা ডোম্বী।

মাটির টান


নবারুণ ভোরে বসুন্ধরা খুলে তার আঁখি
তরল তিমির ছিড়ে আসে আলোকপাখি।

ঘুমের আবেগ মুছে শিশিরসিক্ত ঘাসপাতা
বুকের গভীরে জমিয়েছে খুব শিশির পুলক।

আমি যে কৃষাণ যেতে হবে মাঠে
মুছে ফেলে প্রেমের কোহল।
মাটির কণায় কণায় আছে যত ক্ষুধা
আশার দূরাভাস,
মুঠি মুঠি নিতে হবে তুলে আগামীর সঞ্চয়।

আমার রোদ্দুরমন প্রত্যহ হারায় রোদে জীবনের রঙ।
কেবল চোখের প্রান্তে ঝোলে থাকে স্তব্ধ নীলাকাশ
ঠোঁটের স্পর্শে উড়ে আসে বহুদূর থেকে নির্মম বাতাস
পুষ্পবৃন্ত থেকে স্তনবৃন্তে উড়ে আসে নিবিড় অন্ধকার।

ক্লান্ত তিমির মুছে কোমল অঙ্গের প্রেম ঘরে রেখে
মাটির শরীর শুধু ছুটে মাটির টানে।

আফিম


মনোবৃক্ষে ফুটে আছে প্রদোষের আবেগ
তাই নেশার সুরভি ছড়িয়ে যায় সবদিকে।
আদিম নিসর্গ
পতঙ্গের সচলতা
চঞ্চল নদীর গতি
মেঘের অন্তিম অভিমানে
আমি হয়ে থাকি মোহাবিষ্ট।

যদিও এখানে বাতাস স্তব্ধ বৃক্ষ-পাতা নিষ্প্রাণ
রেখাময় গোধূলি যেন শিল্পীর হেয়ালী তুলির টান।

এই শ্বাশত মুহূর্ত
আমাকেই করে রাখে চিত্রিত
মদির চিত্রকলা যেমন।

সে কী আর জানতুম
কুসুমদানীতে রেখে গেছ ফণীমনসা!

তবু সন্ধ্যার সান্নিধ্যে এখানে নদী হয় কুয়াশার মতো হীম;
পরিযায়ী পাখিরা উড়ে যায় সুদূরে
কেবল রেখে যায় বেদনার আফিম।

এগারো এগারো তেইশ


বিরোধ ও বারুদের ঘ্রাণ থেকে
কী আর আশা করা যায়,
একটি দেশ কতোবার জন্ম নিতে পারে!

অলৌকিক বৃষ্টি কই?
শীতল হবার বাসনা অর্ধ শতাব্দী ধরে
জ্বরঘোরে কাতর বিছানায়।

তবু বন্ধনের রাখি নিয়ে এক মায়াবী হাত
পদ্মার উত্তাল ঢেউকে বশ মানায়।
কী ক্যারিশমা ওই হাতে
মাথার উপরে চালায় রেল
পাতালে গাড়ি
আমার শহরেও বাজে রেলের বাঁশি।

রূপচাঁদা, ইলিশ, লইট্যা, বাগদা, গলদার
দৈজ্জার পাড়ে-
তোমাকে স্বাগতম-এক সমুদ্র অভিবাদন।
আজ
তোমার শ্রীচরণে রেখে যাই হাজার প্রণাম।

অনুবাদ


বঙ্গোপসাগরের অনুবাদ কীভাবে করি!
তবু পরখ করার অভিলাষে ছুঁয়ে দিলে ক’ফোটা জল
আমাকে অসম্ভব নীল বেদনায় ডুবিয়ে মারতে চায়।

সতর্ক ডুবুরির মতো ফিরে আসা মানে
একজন ব্যর্থ লেখকের টেবিলে মাথা টুকা ছাড়া আর কী!

আকাশের অনুবাদ আমাকে দিয়ে হবে না,
নীলিমা অন্যরকম।
উচ্চতার গর্বে দাঁড়িয়ে থাকা এভারেষ্টের চেয়েও
তার অহংকার অধিক।

আমার চারপাশ দিয়ে চলে গেছে বহুশত ছায়া ছায়া পথ।
আমি অপেক্ষায় থাকি রাতের,
অন্ধকার অনুবাদ করে জ্বালিয়ে দিতে
এক আকাশ নক্ষত্র।

No comments

FACEBOOK COMMENT