প্রাণজি বসাক
বাংলাদেশ সংখ্যা
প্রাণজি বসাক
না বলা কথাগুলো……
জন্মলগ্ন //
…. একটা বিশেষ তাগিদ ঘাড়ে চেপে বসে আর কোনো কথা না বলে আমরা তিনজন ( প্রাণজি/ পীযুষ / প্রণব) গত অক্টোবর মাসে বেরিয়ে পড়ি বাংলাদেশে কবিতা ভ্রমণে। সঙ্গে মন ভরা উচ্ছ্বাস আর ব্যাগ ভর্তি বাংলা কবিতা। শুধু কথা আর কথা আর নির্ভেজাল ভালবাসা। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ফরিদ ভাই হাইজ্যাক করে নিয়ে যায় তার গৃহে। সেখানে উপস্থিত হল সস্ত্রীক অরবিন্দ চক্রবর্তী। এবার আমার ব্যাগ থেকে বের হলো কবিতার বই আর পীযুষ বের করল " নির্বাচিত দেহলিজ " প্রিন্টেড কপি। আদানপ্রদান হলো বই এবং ভালোবাসা। শুরু হলো এক ভিন্ন স্বাদময় যাত্রা। ফরিদ ভাইয়ের আতিথিয়েতায় নৈশভোজ সেরে চট্টগ্রামমুখী বাসে সারারাত ভ্রমণ শেষে ভোরবেলায় পৌঁছে যাই গেস্ট হাউস কর্ণফুলীতে। মধ্যরাত অবধি সহাস্যবদনে সঙ্গ দিল কবি লেখক ডাক্তার আশরাফুল জুয়েল। সোহাগ বাসে আমাদের যত্নসহ নিয়ে চললেন রাসেলভাই।
….. হ্যা। ইউসুফ মুহম্মদ সাধারণ সম্পাদক হাটখোলা ফাউন্ডেশন আমন্ত্রণপত্র পাঠালেন চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব ও বইমেলায় অংশ গ্রহণ করার জন্য। আমরা উপস্থিত। পীযুষ প্রণবের প্রথমবার বাংলাদেশে আসা। আমি বহুবার বাংলাদেশে আসলেও এই প্রথমবার চট্টগ্রামে কোনো অনুষ্ঠানে তিনদিনের জন্য আসা। পীযুষ প্রণবের লাগামছাড়া উৎসাহ উদ্দীপনা, কি ছেড়ে কি করি। তিনদিনের অনুষ্ঠানে প্রতিদিন কবিতা পাঠে অংশ গ্রহণ করা এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করা মধুরময় হয়ে ওঠে। পীযুষ প্রায় সবাইকেই তার সম্পাদিত অনলাইন পত্রিকা " দেহলিজ " এ লেখা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখল। সে নির্বাচিত দেহলিজ প্রিন্টেড কপি তুলে দিল অনেককেই। আমাদের অর্জন যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে। আমরা আহ্লাদিত।
…… তিনদিন পর এক ভোরে প্রিয়তম গেস্ট হাউস কর্ণফুলী ছেড়ে চললাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্য। এবার আমাদের জাহাজের পটভূমিতে বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি সংগঠক মানিক বৈরাগী। উনি আমার বহুদিনের বন্ধু। গতকাল রাতে আমাকে বিশেষ উপাধিতে ভূষিত করলেন – দরবেশ কবি। আমি নাকি জলেও নেই বায়ুতেও নেই। পীযুষ উৎসাহিত হয়ে কবি মানিক বৈরাগীকে দেহলিজ পত্রিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধির দায়িত্ব অর্পণ করল।এবার দিল্লি যেন গমগম করছে। পার্শ্ববর্তী সাগরের হাওয়া যেন দিল্লির বুকে আছড়ে পড়ছে। ভালোবাসায় প্রেমে সম্পৃক্ত।
….. রামু। ইতিহাস চেতনা বোধে লিখতে গেলে অন্যরকম হয়ে যাবে। আমি শুধু বাংলা সাহিত্য চর্চার দিক থেকে আমাদের এই ভ্রমণের উপযুক্ত সংবাদটুকু তুলে আনছি। কবি মানিক বৈরাগীর সাহচর্যে রামু এক অনন্য সৃষ্টি হয়ে থাকল আমাদের বোধে। বৌদ্ধ স্থাপনা নিদর্শন হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও মানুষজন এবং একটি লাইব্রেরি বাংলাদেশের জলহাওয়ায় আবিষ্ট হয়ে আমরা ঋগ্ধ হলাম। শুধু তাই নয় সান্ধ্যকালীন সাহিত্য সমাবেশে আমরা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠলাম। ধন্য সম্প্রীতির শহর রামু।
……. প্রেরণা। বোধ। দায়িত্ব। ভালোবাসা। বাংলা ভাষা। পত্রিকা। দেহলিজ পত্রিকার সম্পাদক পীযুষ বিশ্বাস ঘোষণা করে ফেললো – বাংলাদেশ সংখ্যা করা হবে। হোক। কথাটা একবার আমিই কানে দিয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, ও এই বিশেষ বাংলাদেশ সংখ্যার সম্পাদনার দায়িত্ব আমাকেই দিয়ে ফেললো। প্রণব সায় দিল এই মহৎ কাজের জন্মলগ্নে।
কথালাপ //
…. কক্সবাজারে সন্ধ্যা। হ্যাঁ,এই শিরোনামে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় একটি কবিতা আমাদের বাংলা সাহিত্যে রেখে গেছেন। কবিদের অন্তত মনে পড়বে কক্সবাজার এলে। মৃদুমন্দ বাতাসে হালকা বৃষ্টি পড়ছে। আমরা আজ মানিক বৈরাগীর সৌজন্যে হোটেল শৈবালে উপস্থিত। কবি লেখক সাহিত্যিকের সমাগম। শুভেচ্ছা বিনিময় এবং পরিচয় পর্ব শেষ হতেই কবিতা পাঠ শুরু হয়। চলতে থাকে। উৎসাহে চমক লাগে। সাহিত্য আসরটি কোনো সীমাবদ্ধতায় আঁটকে পড়ে না। উন্মুক্ত হয়ে ওঠে ভালোবাসায়। আমরা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠি। বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক এমন সৌহার্দ্য। সাহিত্যের মেলবন্ধনে
সম্পৃক্ত। দেহলিজ বাংলাদেশ সংখ্যার জন্য লেখা দিয়ে সাহায্য করার কথা জানিয়ে রাখা হলো।
….. পূর্ব পশ্চিম, ঢাকা। কেয়ার অফ সম্পাদক আশরাফুল জুয়েল। বাংলামটর এলাকায় সান্ধ্যকালীন আয়োজন। জমজমাট আসর। আসরে একে একে তারা-নক্ষত্র ফুটে উঠল। মনে হলো ঢাকার আকাশের সব তারকামন্ডল আজ এই আকাশে। ব্রেভো কবি সম্পাদক জুয়েল ভাই। অনেক আলাপ সংলাপে সময় কাটতে থাকে। সময় বয়ে যায় কবিতায় গল্পপাঠে আলোচনায়। এখানেই সবার জন্য নৈশভোজের আয়োজন করা ছিল। তাও একসময় সাঙ্গ হলো। এবার বিদায়ের পালা। আমরা কাল সকালে উল্লাপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেব। এমন একটি সন্ধ্যা মননে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। উপস্থিত সবাইকে সম্ভাব্য বাংলাদেশ সংখ্যার জন্য লেখা দেবার অনুরোধ করা হলো।
….. সভাপতি, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ। নজমুল হেলাল। দীর্ঘদেহী। যেন ওনাকে ডিঙিয়ে দর্শনা পেরিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া যাবে না। আমি নাম দিয়েছি – বিষ্ময় পুরুষ। দু’রাত উল্লাপাড়ায় থাকার সময় আমরা শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি ঘুরে আসি। প্রণাম করে আসি কবিকে। দেয়াল ছুঁয়ে অনুভব করার চেষ্টা করি বিশ্বকবির ছোঁয়া পরশ।
হেলাল ভাইকে জড়িয়ে ধরে শ্বাস নিই এক মুগ্ধতার।
হে বাংলা, আর ক’হাত দূরেই কাঁটাতার। দ্বিখণ্ডিত হয়ে আছে বাংলা মা। আমরা অনুবাদ করতে থাকি ভালোবাসা। প্রেম। সময় বলবান। একসময় বিষ্ময় পুরুষ আমাদের একটি চিরন্তন বাহনে তুলে বিদায় জানালেন। কিছু সময় পরই আমরা ভালোবাসার কাঁটাতারে বিদ্ধ হয়ে এপারে চলে আসি।
এপার মহলে //
….. বহিরগাছি। নদিয়া জেলার একটি গ্রাম। আমাদের সঙ্গী পীযুষের গ্রামের বাড়ি। উঠলাম। রাত্রি যাপন হলো। পরদিন সে এক বিশাল আয়োজন। তিনভাই এবং পরিবারের সবাই মিলে দ্বিপ্রহরে শুরু করল সাহিত্য আসর। আশেপাশের কবি লেখক গুণিজন সমবেত হলেন। এবং একদল যুবক এই প্রজন্মের সাহিত্যচর্চাকারী, তারা অনুষ্ঠানকে এক অন্যমাত্রায় নিয়ে গেল। অবাক হলাম আমার একটি কবিতা নিয়ে নানায় প্রশ্ন। খুবই অবাক হবার। মধ্যাহ্নভোজ পরিবেশিত হলো। সবাই খুব আনন্দে উপভোগ করল এই পরিবারের সাহিত্যানুরাগ। সর্বতোভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক।
…… ফেরার পালা। শেষ বিকেলের এক ট্রেনে চড়ে বসলাম। শেয়ালদহ। দমদম বিমানবন্দর। মধ্যরাতের কোনো এক বিমানে বসে আমরা শেষরাতে দিল্লিতে নেমে ভোর ভোর স্বগৃহের ডোরবেল বাজালাম।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং…..
কবি প্রাণজিকে আন্তরিক শুভকামনা।
ReplyDeleteবাহঃ, একটা সুন্দর জীবন্ত প্রতিবেদন ও রোজনামচা (ডায়েরি ) পড়লাম।
ReplyDelete