DEHLIJ

আসাদ মান্নান

শূন্যে গেল নদী উড়ে

 আসাদ মান্নান




একটা নদীর তীরে চলো যাই
আমরা সূর্যাস্ত দেখি;
আমার প্রস্তাব শুনে
নড়ে চড়ে ওঠে নিচে কবরের মাটি,
শ্মশানখোলায় গর্তের ভেতরে থাকা
শৈশবের মুরগিচোরা খেকশিয়াল
গা ঝাড়া দিয়ে ঘাড়টা বাঁকিয়ে দেখে
কাঁকড়ার খয়েরি দাঁতের মতো
এক ফালি বাঁকা চাঁদ ফাঁকা মাঠে
হালকা শাদা কুম কুম আলো ছড়িয়ে দিয়েছে;
চতুর শিয়াল মনে মনে ভাবছে
কৃষাণীর খুপড়ি থেকে মুরগি ধরার
এই তো প্রকৃষ্ট সময়!
যতই পাহারা দাও
লাভ নেই
যে মুরগিটাকে ধরার জন্য
শিয়াল ওঁৎপেতে আছে
সেটা ধরা পড়বেই :
এ দৃশ্যে নিমগ্ন হয়ে
এক টানা ঘুমের ভেতরে
যতীন বাবুর বাঁশবাগানের মাথার উপর
ঝুলে থাকা চাঁদের হাসির
গল্প বলতে বলতে খালি পায়ে
গোধূলির হাওয়াকে সঙ্গে নিয়ে
যে আমরা সূর্যাস্তে নদীর দিকে যাচ্ছি
তাদের পরনে যে-কাপড়
ওটাকে বলে না কেউ আব্রু; বলে--
সুগন্ধী ছিটানো শাদা একটুকরো জীবের নিয়তি!


সারিবদ্ধভাবে আমরা হাঁটছি দ্রুত সামনের দিকে
আমাদের থামিয়ে দেবার মতো কেউ নেই--
কেউ যে আসবে না!
যে থামাতে আসবে তার অন্যকোনো পথ নেই
তাকেও যে হাঁটতে হবে সরল রেখায়!
হায়!
সূর্যাস্তের খেয়াতে ভাসার জন্য যাত্রীসব
একে একে আসছে অদৃশ্য নদীর তীরে
আমিও এসেছি এইমাত্র
বলা যায় আমাকেও আনা হলো:
কালো বাঁকা নদী!
তাকে উল্টোদিকে টান মেরে সোজা হতে বলতেই
সেই একরোখা নদী
হাওয়াকে জলের আঁচলে
কী সুন্দর ভঙ্গিতে জড়িয়ে
চোখের পলকে মহাশূন্যে উড়ে গেল!
আর আমি?
মাটিকে মায়ের মতো ভালোবেসে
চূড়ান্ত ঘুমের খাটে পড়ে থাকলাম
নদীহীন শূন্যতার স্রোতে ভেসে ভেসে...
পড়ে থাকলাম
পড়ে আছি
ঘড়ি থেকে কাঁটা পড়ে গেছে অন্ধকারে।

No comments

FACEBOOK COMMENT