DEHLIJ

খালেদ শহীদ

প্রিয়মুখ পড়শী

খালেদ শহীদ



বড্ড অচেনায় বয়ে যায় সময়
অধিকার-স্বরে বলে না কথা প্রিয়মুখ পড়শী
শরৎ-পূর্ণিমায় খুঁজে পাইনা এখন স্নিগ্ধতা
চেনা আঙ্গিনায় পদচারণ করে অন্ধতা-উল্লাস, ক্রন্দন

বড্ড অচেনায় বয়ে যায় সময়
মুগ্ধতাগুলো ব্যথায় কাতর, প্রিয়মুখ পড়শীর-
বিচূর্ণ স্বরে জানান দেয় এখনো
ছাই-ভস্মে লুকিয়ে আছে কষ্ট-অন্ধকার
হৃদ-অন্তপুরের বদ্ধ ঘরে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
রক্তক্ষরণের মতো বলে প্রীতি হত্যার কথা।


বিষন্ন-ব্যর্থতা ভর করে শরৎ-পূর্ণিমা
প্রিয়মুখ পড়শীর চোখে অন্ধতা-উল্লাস, ক্রন্দন কথা
আর্তনাদ স্বরে কম্পন তুলে আমার বুকে
বড্ড অচেনায় বয়ে যায় সময়।


চিত্ত-মননে অগ্নিময় হয়ে ধ্বস নামে
শরীর থেকে ঝরে লোহিতকণা
কষ্ট-কান্নায় রক্ত-ঘর্ম হয়ে
পড়শীর প্রীতি কথা এক চিলতে হাসি
ছাই-ভষ্মে লুকিয়ে থাকা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
কষ্ট কান্নার প্রতিবাদে বলে প্রীতি হত্যার কথা।


অনড় বিশ্বাসে ফিরতে চাই প্রাচীনে
আমার প্রকৃতি ভালোবাসার কথা বলে
পড়শীর সাথে আমি, আদি-দিগন্ত ইতিহাসময়
মুগ্ধতার সীমানা পেরিয়ে শুভ্রতার আকাশ ছোঁয়-
অনড় বিশ্বাসে সবুজে সমাহিত কষ্ট-অন্ধকার
নান্দনিকতায় আলোড়ন তুলে জটরভূমি রামু
পল্লবিত সবুজে ছন্দময় হয় নন্দনতত্ত্ব
শৈল্পিকতার নিদর্শন হয়ে উঠে, ইতিহাস-
ভালোবাসার কথন অনুরক্তে পুষ্পিত হয়ে বলে
বসবাস আমাদের প্রীতির কথনে, ঐতিহ্যের প্রাচীনে।


আমার সত্ত্বায়, আমার প্রাপ্তিতে অবিচল অহংকার
শরৎ-পূর্ণিমায় শুভ্রতার বিশ্বাস ছোঁয় দিগন্ত রেখা
পড়শীর প্রিয়মুখ-প্রাঙ্গন আড়াল করে অচেনা সময়
নন্দনতত্ত্বে সমস্বরে বলি ভালোবাসি, ভালোবাসি।


আমার ভালোবাসায় বাংলাদেশ
আমার ভালোবাসায় জটরভূমি রামু
আমার ভালোবাসায় পড়শীর প্রিয়মুখ-ঐতিহ্য।

নন্দন তত্ত্বে ভালোবাসার কথা বলতে বলতে
প্রীতির বিশ্বাসে প্রিয়প্রাঙ্গনে সমাহিত হোক
অচেনা সময়-অবিশ্বাস, হৃদয়ের বুদবুদ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
ভালোবাসার কথা বলতে বলতে
ঐতিহ্য-প্রাচীনের সুর-ছন্দে এঁকে যাই
তোমাতে আমি প্রীতির কথনে প্রতিধ্বনি
প্রকৃতির মানবিক শিল্পকর্ম প্রিয়মুখ পড়শী।


পঞ্চান্নের সিঁড়ি



স্বপ্নঘোরে প্রান্তর ছুুঁতেই স্বপ্ন ভেঙ্গেছে টের পাইনি
আমার রোদ্দুর সময়ের ছায়াচ্ছন্ন সবুজগুলো
আচ্ছাদন ভেঙেছে কবে কখন টের পাইনি,
তপ্ত হাওয়ায় মেঠোপথের শুকনো পাতারাও
মর্মর শব্দে সঙ্গী হয়েছে আমার রোদ্দুর সময়ে
জীবন পথে পঞ্চান্নের সিঁড়ি পার হয়েছি টের পাইনি।


আমার রোদ্দুর সময় পথ হারিয়েছে স্বপ্নঘোরে
অন্তহীন ভুলে কবে কখন কিভাবে টের পাইনি
পঞ্চান্নের সিঁড়িতে দিগন্ত ছোঁয়া স্বপ্নময় মুহুর্তগুলো
বুঝায় আন্তরিকতা কত কাছের, রক্ত-আত্মার বন্ধনে
শরীর যেমন বুঝায় গতরের দূর্বলতা, রক্তকণায় তফাত
স্বপ্নঘোরে স্বপ্ন ভেঙ্গেছি রোদ্দুর সময়ের টের পাইনি।


স্বপ্ন ভাবনায় বোধের গভীরে শব্দ বুনন থমকে পড়ে
আন্তরিকতা, রক্ত-আত্মা বুঝি সম্পর্কের করাতে
তখন আমার রোদ্দুর সময়, এখন পড়ন্ত বিকাল
কবে কখন পৌঢ়ত্বকে করেছি আলিঙ্গন টের পাইনি।


ধ্যান মগ্নতায় পথ হারিয়ে বিধ্বস্ত হই যন্ত্রাংশের মতো
বেদনাহত টানাপোড়ন সংসারে আমি যেন যন্ত্র মানব
ছিন্ন হয়েছি বারে বারে একাকীত্বে টের পাইনি।


পাশে থাকা সম্পর্কগুলো টালমাটাল সময়ে
স্বপ্ন ছোঁয়া রোদ্দুর সময়ের মতো আমার হয় না
কবে কখন পঞ্চান্নের সিঁড়ি পেরিয়েছি টের পাইনি।



অন্তমিল




জীবনে খুঁজিনি কখনো, চলার পথের অন্তমিল
এখনও খুঁজি বলে মনে হয়না
এই অন্তমিল না খোঁজাতেই স্বপ্নগুলো
নীরবেই বিসর্জন হলো।


কিন্তু আমাকে ঘিরে থাকা সম্পর্কগুলো
নবতরে আলো ছড়াতে চায়।
আমার মধ্যে বেশমাল বসবাস,
কি করে খোঁজে পাবো জীবনের অন্তমিল।


আমার মধ্যে কাজ করে না
আত্ম-অহমিকা
উচ্ছ্বাসা বা প্রকাশ করার বোধ
খোঁজে পাই না নিজের ভিতর।


পঞ্চান্ন পেরুলাম বয়সের দিনক্ষণে
ক্রমশ স্থবিরতা দিকে এগোচ্ছি।
আমাকে ঘিরে থাকা সম্পর্কগুলো
বারে বারে ঝাঁকায় আমাকে,
ঝাঁকিয়ে জাগাতে চায় মনন-চিত্তে।


আমার জেগে থাকায় নাকি
ওদের জেগে থাকার অবলম্বন,
ওরা সচল জেগে থাকতে পারলেই
জীবনের অন্তমিল খোঁজে পাবে।


কিন্ত আমি, বারে বারে ব্যর্থ হচ্ছি
নিজের উচ্ছ্বাসা বা নিজেকে জানান দিতে
ব্যর্থ হই বারে বারে, আত্মপ্রকাশে
ওরা কি উপেক্ষিত হচ্ছে, আমার কাছে?



বোধের গভীরে আমি পরিচয়হীন


কোলাহল সময়ে ইদানীং নিস্তব্ধতা ভর করে
সহজ সমর্পণে তোমাদের মাঝে আমি কলহাস্যে উচ্চকন্ঠ হই না, 
উচ্চারিত হয় না বোধের কথন
নিরবতায় প্রত্যাশা গুলো গৃহকোণে দাঁড়িয়ে রয়
ধীরলয়ে ছোঁয় পতন নিঃশ্বাসে নিয়তির ছায়া
বোধের গভীরে যেতে পারি না এখন।


যখন যেখানে থাকি ইচ্ছের ব্যাকুলতা
দিগন্ত বিসারী আলোয় আছড়ে পড়ে,
ভালোবাসার চাওয়া গুলো জটিল সমীকরণে
মুখ তুবড়ে পড়ে, চাঁদ লাবণ্যে মন ভরে না
জীবন গল্পে যখন আমি আমাকে ছুঁই
পারি না যেতে স্বপ্ন স্বরে বোধের গভীরে।


ব্যর্থতা গুলো রক্তচক্ষু হয়ে দাঁড়ায় সামনে
নিজের ভিতরে আমি ইচ্ছের ব্যাকুলতায়
ভেঙে পড়ি নিরব নিথর নিরবতায়
মনগহনে প্রত্যাশার প্রাপ্তি আমার হয় না।

কোলাহল কলহাস্যে যখন যেখানেই থাকি
যেন হাজার বছর ধরে আমি একা

ব্যর্থতার দায়ভারে প্রত্যাশার প্রাপ্তি গুলো নতজানু বোধের গভীরে 
আমি পরিচয়হীন, নিস্তব্ধতায় একা।



এই ভোরের সকাল হবে



সেদিন বাবা, বারান্দায় বসেছিলেন ভোরে
রেডিওর নব ঘুরাতে ঘুরাতেই
কাঁপা-কম্পিত কন্ঠস্বর, বত্রিশ নম্বর-মিন্টু রোড়ে
রক্তস্তুপ ঘাতকের গুলি, 'শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে'।


বাবা নির্বাক, অতল গহ্বর থেকে স্তব্ধতার নিঃশ্বাস ছেড়ে
কষ্ট ঢেউ সাঁতরে বলেন, এ কী হলো!
বাবার চোখে আঁধারের ধূলিঝড় রক্ত কণিকা হয়ে নামে
বাংলার প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু, এই কী তাঁর প্রতিদান!


সেদিন আমি বাবার পেছনে চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে-
দু'হাতে আঁকড়ে ধরা রেডিও, অশ্রুস্বজল বাবা
স্তব্ধতায় আরও নির্বাক হয়ে পড়েন-
কাঁপা-কম্পিত ভয়ার্ত কন্ঠস্বর রেডিওতে তখনও

১৫ আগস্ট আলো-আঁধারে ঘাতকের বুলেট
বুক ঝাঁঝরা হয়ে লুটিয়ে পড়ে শোষিত মানুষের কন্ঠস্বর
রক্তস্তুপে সিঁড়ি, শয়নকক্ষ, রাজপথ-
মৃত্যুতে নতজানু বঙ্গবন্ধু, পরিবার-স্বজন
মুখ তুবড়ে পড়ে সবুজ মৃত্তিকার স্বপ্ন জাতিস্বত্তা।


নির্বাক আর্তনাদে ঝাঁঝরা হয় আমার বাবা
ঘাতকের বুলেটে বিদীর্ণ দীর্ঘ ঋজুদেহ, বলবে না আর
বাংলা-বাঙালির উচ্চারিত সত্যে সভ্যতার কথা।


বাবার কন্ঠস্বরে স্তব্ধতার বেদনা, আজও বাজে বুকে
সেদিন বাবা স্তব্ধতার আস্তরণ ভেঙ্গে বলেছিলেন,
সময় সত্য উচ্চারণে হাঁটে, জাতিসত্তার পরিচয়ে-
নৃশংসতার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হবে এই বাংলায়।


সেদিন বাবা আত্মোক্তি কন্ঠে বলে ছিলেন-
রক্তদানের এই বাংলা, আত্মদানের বাংলায়
তুমিই জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


সেদিন বাবা দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে বলেন
জন্ম গৌরবে, জয় বাংলার স্রোতে এই ভোরের সকাল হবে।




No comments

FACEBOOK COMMENT