ফরিদ আহমদ দুলাল
কবিজন্ম
[কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ বন্ধুবরেষু]
ফরিদ আহমদ দুলাল
বিধাতার প্রতিনিধি নয় কবি নিজেই সে স্বয়ম্ভূ-ঈশ্বর
সে নিজেই পরিপার্শ্ব সবুজ উদ্যান রচনা করে খেলাচ্ছলে
ফুল-পাখি ও বৃক্ষের সাথে নিজস্ব ভাষায় একা কথা বলে;
কবি কোনো কৃপাপ্রার্থী ভীরু দেবতার অবতার নয়
কবিদের পরম্পরা নেই নিজস্ব সময়ে কবি স্বতন্ত্র আসমান
স্বয়ং সে প্রজাপতি-ব্রহ্মা-বিষ্ণু আদিপিতা ভগবান।
কবি সূর্যালোকে বাঁচে পৃথিবীর বায়ু-জল-শস্যে ওঠে বেড়ে
পৃথিবীকে আলো দিতে ঈশ্বরের বুক থেকে অগ্নি নেয় কেড়ে,
কারো পিতা অনুগত স্বামী নয় কবি স্বভূমে আত্মাধিশ্বর
নারীর জঠরে নয় কবি আবির্ভূত হয় নিজেরই পঙ্ক্তির ভিতর।
গোষ্ঠী-গোত্রের পতাকাবাহী অশ্বারোহী নয় কবি
ক্ষমতাসীনের মেনোফেস্টোতে নির্জলা মিথ্যাচার নয়
গজদন্তহারে বিপণনযোগ্য নয় কবি সৃষ্টির বিস্ময়;
বীজ-মাটি থেকে অঙ্কুরিত নয় বৃষ্টিতে-রোদ্দুরে বিকশিত নয়
স্বর্গ-মর্ত্য-আকাশ-পাতাল কবির মুষ্ঠিতে থাকে
নিজেকে নিজেই গড়ে ভাঙে আপনারে নিজে একা যুদ্ধে ডাকে!
এপিটাফ
সুকীর্তির ভারে যারা নুয়ে থাকে তাদেরই এফিটাফ লেখা হয়
ঝরা পাতাদের এপিটাফ থাকে না কোত্থাও বিশ্বময়,
ঝরা পাতারা বারবার ফিরে আসে অমোঘ মৃত্যুকে করে জয়
এপিটাফ লেখে না ফড়িং-প্রজাপতি-ফুল প্রকৃতির থাকে না সংশয়;
এপিটাফ লেখে ভয় চিত্তের সংশয় মৃত্যুকে যাদের ভয়
পাথরের বুক খুঁড়ে আগামীর কাছে ভয় উৎকলিত হয়;
স্মৃতিময় যত পথ যত বৃক্ষরাজি গোপাটের অচেনা রঙিন ফুল
রজনীর আঙিনায় ঝরে শিউলি কুল-ফুল এবং বকুল;
পরকীয়া রাধিকার এপিটাফ থাকে ঝরা পাতার মর্মরে
এপিটাফ লিখে রাখি বৃষ্টিভেজা উদ্যানের ব্যার্থ অভিসারে।
কষ্ট প্রবাহ অচলায়তন হলে কষ্টগুলো এপিটাফ করে রাখি
সুকীর্তি জমেনি বলে কষ্ট-পংক্তি দিয়ে ব্যর্থতার লজ্জা ঢাকি
বালক মাছের উদাস সাঁতারে এপিটাফ লিখে রাখে নিশিবক
বলাকার সারিবদ্ধ ফেরার উড়ালে চোখ রাখে তৃষিত চাতক;
পাথরের বেদীতে অঞ্জলি দিতে যদি ভুলে দীর্ঘশ্বাস পড়ে
মনে রেখো এপিটাফ লিখেছি ভালোবেসে তোমার অন্তরে।
Post a Comment