জলিল আহমেদ
বাবাকে মনে পড়ে
জলিল আহমেদ
যদিও কাঁঠাল তলায় ঝিরিঝিরি বাতাসে
তাঁর দেহে লবণ ফুল ফুটে উঠতো, আহা বাবা
ঘামে ভেজা কোল বেয়ে বাবাগাছে উঠে যেতাম
পেড়ে আনতে স্নেহফলগুলি। তাঁর কাঁধে ছিল সাফল্যের স্বাদ, আহা বাবা।
দম বেচে কিনে আনতো হাওয়াই মিঠাই, সেদিন মা
জল দিয়েই পাঁচফোড়নে ফেলে দিতো হাতে তোলা শাক।
কী স্বাদ! টায়ারের ফিতে করা কাঠের খড়ম
মা যখন সন্ধ্যে বেলা খুঁজে ফিরতো পা-দুটোকে মাটি থেকে ছাড়িয়ে আনতে,
বাবার বাহুতে তখন দিবসের ক্লান্তি সব নুইয়ে পড়ে
মাটির মাদুরে।
আমার তখন কী, মাঝখানে নেমে আসতো স্বর্গের সুখ
মাটির শীতলে থাকে- বাবা থেকেই টুকে ফেলি সেই অনুবাদ।
আজ আমি সে সবের অনুবাদগুলো সংকলিত ক’রে ক’রে
হেঁটে চলি ডিজিটাল পথে। বাবার পীঠের নুনে জিভ রেখে পেরিয়ে যে স্বাদ!
এসো গো সন্তানেরা...কিছুতো পেতেও পারি- খুঁজে দেখি!
বসি না প্রাণের পাশে
থামাও না ড্রাইভার, পাশে একটু বসি- এইতো হেঁটে হেঁটে
চলে যাচ্ছে নদী, সবুজের কোল ঘেঁষে - ফসলের ঘ্রাণ বুকে নিয়ে।
বাতাসও নরম খুব- মায়ের ছায়ার মতো মেলে আছে, সূর্যও কিছুটা নীরব
ঝুলে আছে সবুজের দিকে- পাড় ঘেঁষে করো ব্রেক।
না না কোনো বিছানা নয়, না কোনো চাদর বিছানো
মায়ের নরম কোলে দেয়া আছে ঘাসের গালিচা, শীতল ছায়ার কথা
ওই দ্যাখো দেবদারু, বটের সীমানা ঘেঁষে মিশে আছে
প্রকৃতির নিমগ্ন মায়ায়। নিয়ে নিই একটু পরশ...
একটু জিড়িয়ে নিই, আমিও ক্লান্ত খুব নগরের ভ্রান্ত আয়োজনে,
জানো না যে ছুটি নেই- প্রত্যহের বিকোনো রুটিনে
চাওয়ারা ছায়ার মতো লেগে থাকে অপারগ দেহে
লেগে থাকে ব্যর্থতার গ্লানি ব্যক্তিত্বের পরম প্রশ্বাসে- একটু জিড়োতে দাও।
নদীরা আগুন চুষে, গ্লানিগুলো গিলে ফেলে
চোখে চোখে চেয়ে দ্যাখে আরশিনগর, বহুতল হৃৎপিণ্ড জুড়ে
দিয়ে যায় স্নেহের পরশ...
প্রাণটা জুড়িয়ে যাই খুব- ড্রাইভার, একটু থামাও।
Post a Comment