সরিফা সালোয়া ডিনা
সরিফা সালোয়া ডিনা-র কবিতা
সরিফা সালোয়া ডিনা
১. চেরাপুঞ্জি
চেরাপুঞ্জিতে উড়ছে মেঘ
স্পর্শে শিশিরানুভূতি ... পুঞ্জ পুঞ্জ মহোৎসব
এত মেঘ মেঘদল কোথা থেকে উড়ে এলে
আবাস কোথায় জানিনা সে সব
শুধু জানি ধারাজলে স্নাত পাহাড়-পাথার
আর খাসীবাসী
আর যাযাবরদল !
উড়ে যাচ্ছে মেঘ উড়ছি আমি
শীতের আমেজে ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘমালা
আমাকে ওড়ায় আমাকে পোড়ায়
আমি মিশে যাই শূন্যে ...
পেছনে পড়ে থাকে সেভেন সিস্টার্স ফলস
আশ্চর্য গুহামালা পাহাড়ী জনপদ ...
২. ডাকবাক্স
ক. শহরের সব ডাকবাক্স বন্ধ হয়ে গেছে কবে
খোঁজ নেই ডাকপিয়নের
পেশাবদলের ধারাপাতে আমরা সবাই
হাওয়া বদলের খেলায় মাতি।
আমাদের জলার্দ্র জীবনে আহত-আর্তনাদ
পায়ে পায়ে বিপন্ন-বাতাস
জলার্ত জীবন খোঁজে উচ্চতা আর উষ্ণতা
বন্ধ খামের খোলা চিঠির অপেক্ষায় কাটে অযুত-জীবন।
খ. তোমায় লেখা পত্রগুলো জমিয়ে রাখি ডাকবাক্সে
কত বসন্ত পেরিয়ে গেল, ঠিকানাহীন চিঠিগুলো অনাথবৎ ...
জ্যোৎস্নায় ফোটা সাদাফুলের সুবাসিত উত্তাপে
বিভোর হইনি কতকাল
রাতপাখির আর্তনাদ-সংকেতে উদ্বাহু জীবন করেছি পার
আর্ত-পদাবলী উচ্চারণে গেয়ে গেছি জীবনের গান।
আষাঢ়-শ্রাবণ গত ! গত আরো কতকাল !
তোমায় লেখা গুচ্ছ গুচ্ছ পত্রপুঞ্জ উড়ে গেছে বসন্ত-বিলাপে !
৩. ভালোবাসা বনাম বানভাসি
আজকাল প্রায়শ ভালোবাসার গল্প শুনি
প্রাচীন থেকে মধ্যযুগ, মধ্য থেকে বর্তমান কাল, সবার—
এর দেশ কাল পাত্র বিবেচনা নেই, নেই ধর্মাধর্ম, ধনী-দরিদ্র
কিংবা সাদা-কালোর প্রভেদ।
বানের জলের থাকেনা বিবেচনা কোন
ধনী-দরিদ্র-ধর্ম-বর্ণ-সাদা-কালো-পোষক-শোষিত
সকলের মান তার কাছে সমান
এইখানে নিরপেক্ষ বানজল
আমাদের যাপিত জীবনে ক্রমাগত উষ্ণ হয়েছে ধরাতল
কমেছে সবুজ-প্রবাহ শুনিনি বৃক্ষির আর্তনাদ
থামিয়ে জলপ্রবাহ গড়েছি অট্টালিকা অগণন
ভুলেছি প্রবাদসম কবিগুরু বচন—
‘‘যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে
সহস্র শৈবালদাম বাঁথে আসি তারে।”
বানজলে ভেসে ভেসে জলভাসি মানুষ
এবার নতুন ভালোবাসার গল্প শুনি চলো।
Post a Comment