আফিফা ইয়াসের উলফা
বয়েস যখন একুশ
আফিফা ইয়াসের উলফা
সিক্ত নরম হয়ে গেছে আমাদের সব
বাড়াবাড়ি রকমের বস্তুনিষ্ট হয়ে গেছে
একুশ-বাইশ বছরের জীবন পুরনো খাম মনে হয়
ধুলোবালিতে ভরে গেছে সারা নগর বাউল সাধুগুরুগণ
মুখে দিলে কচকচ শব্দ হয়
দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে যায়
গানের পসরায় খুঁজে পাই না আর প্রলেপ ছড়ানো ঘর
প্রগলভে প্রগাঢ় অভিলাষে আমি আমরা সর্বনাম হয়ে যাই
ড্যাশ-কোলন কোনোকিছুই তখন সংজ্ঞায়িত করতে পারে না আর
দু-চোখ যতোদূর সম্ভব শুধু ছলনার ঝুড়ি বুঝি
সংসার,সমাজ,দেশ অবিলম্বে নানা বিধির বগলে রিক্ত ধূসর বিষন্ন যখন
এই ভগ্নহৃদয় পরিবার নিয়ে যাওয়া যায় কোথা
মিছেমিছি মিলেমিশে সম্পর্কের গলগ্রহ বাড়ানোর
উচিৎ শাস্তি পেলে বোধ-হয় শৈশবের বেভুল অসতর্ক মুহূর্তের সেই প্রাণের স্পন্দন কাঁপানোর মর্মার্থ ধরা যাবে!
আমার স্থিরতা
আমার মনের সাথে কথা হয় রোজ
বিকেলের ছবি তুলে হাঁটি রোজ
রোজকার যত্ন-আত্তি আরো কীভাবে নেওয়া যায় তা ভাবি
রোদ এসে নুইয়ে পড়ে যখন আমার সকাল শুরু হয় তখন
এলেবেলে সব কিছু এক একটা কড়া শীলপাথর
ক্ষয়ে যায় সেই পাথর, বাঁচিয়ে নিতে নিতে আর বাঁচা হয় না
আমি ভাবি আর হাঁটি পিছু পিছু
মাঝেমাঝে কয়েকটা কুকুর তাড়া করে
বন্দুকের বেগে আমিও দৌড়াই
লিখতে থাকি পথের বাঁক মিলিয়ে
যে যায় সে যায়
আমি রয়ে যাই সেখানটায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে
স্থিতিশীল সামষ্টিক সবকিছু আমাকে ছাড়িয়ে যায়
আমিই কেবল দৌড়ের ভেতর দাঁড়িয়ে স্থির!
যেনো আমরা মদ্যপ
কবিতারা সব বইয়ের পাতা থেকে বের হয়ে ছুটে, দৌড়ে, এদিক-সেদিক, দলছুট, দে-দৌড়, সবকিছু।
এলোমেলো রেখা ধরে নিয়ে যেতে যেতে বাঁক হারায় সব তারপর অস্পষ্ট স্বচ্ছ, তেজি, গুরুগম্ভীর হাজার বছরের একটা রাত।
আলো থেকে আঁধারে সব পেরিয়েছে নিঃশব্দে যেমন
নৈশপ্রহরীর রাত জাগানিয়া পাখিরা।
ঝাপসা কাঠির ধোঁয়া উঠা চায়ের চুমুক যতখানি জাগ্রত বুঝিয়েছে তারচেয়ে ঢেরবেশি তন্দ্রায় আচ্ছন্ন।
যেন মাথার উপরে গোলাপি রঙের মাছ,
যেন রাতের বেলা আকাশে তেজলি ঘোড়া।
যেন ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে প্রদক্ষিন
যেন সবই আছে কিন্তু সব অদ্ভুত,অদৃষ্ট, অস্পৃশ্য,অদৃশ্য, নিরুপায় ক্লান্ত।
ঠিক যেন সবকিছু মদ্যপ
যেন আমরা মদ্যপ।
ঈশ্বর
অমৃত পান করিতে চাহিয়া পায়ে পিষিয়াছি মানব প্রাণ
এক প্রাণের স্পন্দনে স্পন্দিত বুকে কতোখানি বিষাদ মান
ভবে বাসের বাসা বানাইতে নামিয়া কতো দশা আঘাত হানিলো
আপন মনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলিয়া পড়িলাম নিছক মায়ার মোহনজালে
বিনয়ের ভঙ্গি তথাপি মহাকাল নির্মম এলেবেলে চাষিলো
ধন্যযোগে বারংবার বাদিত হইতে দিও ঈশ্বর আপো-নার দরোবারিতে
এই মেদিনীতে সুখ স্বভাব ধরিয়া রাখিতে দিও ঈশ্বর
রঙ্গ লীলা সাঙ্গ করিয়া উপাসনালয়ে লইয়া যাইও
ফেঁরে ফেলাইয়া হেলাইয়া দিও স্বভাব রপ্ত করিবার
সান্নিধ্যে
মন মজাইয়া দিও আমার আপন মনের দোষের আজবখানায়
দোষ দিও আমারে ঈশ্বর আমার আপন মনের ভগ্নদশার ঘরে!
চুপ
চুপ, একদম চুপ
কথা বলো না, বোবা হও
হাওয়া হয়ে গিলে নাও
শুঁকে শুঁকে শুষে নাও পঁচা ঘ্রাণ
রুদ্ধ হও, নিরুত্তর হও
চুপ, একদম চুপ
শোনো না, কালা হও
কান দিয়ে শ্বাস নাও
শ্বাস নিয়ে ছেড়ে দাও
বন্ধ হও, বাক্স হও
চুপ, একদম চুপ
বোঝো না, অবুঝ হও
ভাবনার ভাবনায় ছুটি নাও
জমাট বেঁধে ফেলে দাও
মত্ত হও, মুক্ত হও
চুপ, একদম চুপ
দৌড়ো না, পঙ্গু হও
চোখের নিচে চলে যাও
আকাশে তোমার ঘর নেই
ঢুকে যাও, দমে যাও
চুপ, একদম চুপ
মুখ খোলো না, তালা দাও
চোখ বন্ধ করো, পর্দা টাঙ্গাও
কান চেপে ধরো, আঙুল দাও
প্রতিবাদ করো না, আগুন নেভাও!
চুপ, একদম চুপ
তুমি নারী, তোমার খুব তর্ক সুর
তর্কেতর্কে যুদ্ধ পুর
সমুদ্রের জলে যেমন উজান তরী
ধরনী তোমার মরণ পুরী
চুপ, একদম চুপ
চুপসে ফেলো যতোসব বেহিসেবী স্বপ্ন
মধুরাতি জ্যোৎস্নায় সে ধোয়া তোমার নয়
কারণ তুমি নারী
ভালো ভাষা কিংবা ভালোবাসা পাওয়া তোমার কাম্য নয়
চুপ করো বজ্জাত নারী
ঐ ঘরের কোণ তোমার
দেয়ালজুড়ে শ্যাওলা বতসঘর তোমার
একঘেয়ে সব মশাল তোমার উপহার
জানালার কপাট হালকা খুলে দেখো নিঃসঙ্গতায় তোমার জীবন!
Post a Comment