নীলোৎপল বড়ুয়া
অমূল্য প্রাপ্তি
নীলোৎপল বড়ুয়া
মানুষ যেমন সংসার করে
আয় রোজগারে করে কাজ,
তারও তেমনি সংসার আছে
বাড়তি আছে কিছু লাজ।
ছাপোষা মানুষ মাস্টারিতে
বউ-বাচ্চার ভরণ-পোষণ,
বাড়তি কোন আয় জুটে না
করতে জানে না ব্যক্তি তোষণ।
জানার মধ্যে বাড়তি যা –
বসে বসে কাব্য করা,
পুরনো বইয়ের পৃষ্টা ঘেঁটে
অচল কথায় মাথায় ভরা।
কাব্যগুলোর প্রশংসা পেয়ে
মনের মধ্যে জাগলো আশ,
মলাট বেঁধে কাব্যগুলো
বই আকারে করবে প্রকাশ।
প্রকাশকের কাছে গিয়ে
মনের কথা যেই জানালো,
পুরো কথা শেষ না হতেই
খরচা বাবদ হিসাব দিল।
সোজা কথা প্রকাশকের –
“কাব্য কেনার মানুষ নাই,
খরচ দিলে ছাপিয়ে দেব
যত কপি আপনার চাই”।
শর্ত মেনে ছাপিয়ে নিল
শত কতেক বই,
প্রশংসা আর অভিনন্দনে
চারিদিকে হইচই।
শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায়
ওঠল ভরে ফেইসবুকের পাতা,
গিন্নিকে তা দেখিয়ে কবি
বলতে থাকে কতো কথা-
“দ্যাখো তুমি বিকোবে বই
শুভার্থীরা কিনবে জনে জনে,
প্রকাশক মোর পরের বইটি
ছাপাতে চাইবে খুশি মনে।
লাগবে না কোন খরচা-পাতি
এমনিতেই তা ছাপা হবে,
বিকোবে বই সন্দেহ নাই
দোকানেতে আসবে যবে”।
প্রশংসা আর অভিনন্দনে
ভাসতে ভাসতে কবি ভাবে-
আর কিছু কাব্য নিয়ে
আরেকটা বই ছাপাতে হবে।
প্রকাশকের কাছে গিয়ে
তুষ্ট কণ্ঠে কবি বলে –
“এই যে দেখুন কাব্য নিয়ে
প্রশংসা কতো দলে দলে।
অভিনন্দন আর শুভ ইচ্ছায়
ভাসিয়ে দিল শুভার্থীরা,
আরো কাব্য চায় যে আমার
কাব্যরসিক পাঠক তারা।
ছাপাতে চাই আরেকটা বই
নতুন কাব্যে নতুন নামে,
তাও পাবে প্রশংসা সবার
ভালোবাসার দামে।“
মুচকি হেসে প্রকাশক কয়-
“অভিনন্দন আর প্রশংসা দিয়ে
ছাপার কাগজ, কালি আর
শ্রম কিনবেন কোথায় গিয়ে?”
শুনে কবির মনে পড়ল
‘পুরস্কার' এর কথা,
রাজকণ্ঠের মালা দিয়ে কি
সেরেছিলো ক্ষুধার ব্যাথা!
পৃথিবী আবারো মানুষের হবে
পৃথিবী আবারো মানুষের হবে!
আগুনের চারিদিকে একসাথে বসে
পুড়িয়ে মাংস খাবো আমরা।
থাকবে না কোন টেলিভিশন চ্যানেল,
দেখানো হবে না কোন বাজার-শ্রেণী সৃষ্টির
নতুন নতুন রান্নার রেসিপি অনুষ্ঠান।
থাকবে না কোন ফ্রিজ,
জমবে না অতিরিক্ত কোন খাবার।
আর অভুক্ত চোখে দেখতে হবে না
কুৎসিত খাদ্যায়োজন।
থাকবে না কোন ব্যাংক, বীমা
বাড়বে না কোন পুঁজির ভুঁড়ি।
বাজারবিহীন পৃথিবীতে জন্ম নেবে না
কোন দুর্ভিক্ষ,
গজিয়ে ওঠবে না কোন ক্ষমতার মহিরুহ।
থাকবে না কোন আইসিইউ, সিসিইউ।
নির্লজ্জভাবে বেঁচে থাকা যাবে না আর
গণমৃত্যুর ভিড়ে।
বন্দুক, গুলি নয় ; কেবল পশু শিকারের জন্য হাতে থাকবে পাথর কাটা অস্ত্র।
ফসফরাস বোমা নয়, পড়লে উল্কাই শুধু পড়বে আকাশ থেকে।
থাকবে না কোন ভাষা
ঢাকবে না কোন সত্য। আর
সীমানার ছুরিতে খণ্ডিত হবে না পৃথিবী।
থাকবে না কোন তাপানুকুল কাঁচের গারদে
কৃত্রিম আলোর জীবন।
বৃক্ষতল আর পাহাড়ের গুহায়
প্রেম জ্বালিয়ে জাগাবো প্রাণ,
চাঁদের জ্যোৎস্নায় ভরাবো স্বপ্ন।
সূর্যের আলোতে পুড়ে, মেঘের বৃষ্টিতে ভিজে
অবারিত স্বাধীনতায় পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াবো
এখান থেকে ওখানে
প্রকৃতির সন্তান হয়ে। আর
আকণ্ঠ জীবন পান করে
নিঃশেষ হবো তারই গহ্বরে।
রূপের আধার
নিভৃতে নিসর্গ মাঝে
কতো সুর প্রাণে বাজে,
নীরব-নৈঃশব্দে কানে শুনি
কে যেন কথা যাচ্ছে বুনি।
কান পেতে রই আমি
নিজেরে শুনি প্রাণের মাঝে,
লাল নদীর স্রোতধারায়
জন্মান্তরের ব্যাথা বাজে।
সুখের ব্যাথা, দুখের ব্যাথা
ফুল হয়ে সব ফুটে,
অন্ধকারের সকল পথ
আলোয় ভরে ওঠে।
অনিমেষ চেয়ে থাকি
প্রাণে ভরা চারিদিক,
নিজের রূপে মুগ্ধ হয়ে
পুড়ি আমি সর্বাধিক।
রূপের বাতি নিভে গেলে
রূপ যে হয় নিরাকার,
বাইরে যতই খুঁজে ফিরি
মন-কুটিরই রূপের আধার।
মাতাল হতে ইচ্ছে করে
মাতাল হলেই মুখ খুলে যায় বাড়ে মনের কথা,
এই নিয়ে মহারাজের বেজায় মাথা ব্যাথা।
মহারাজ ফরমান দিয়েছেন তাই –
পানশালা থেকে বেরিয়ে যেন কেও কথা না বাড়াই।
যত ইচ্ছা পান কর, যত ইচ্ছা যাও,
শরাব-সাকি খাঁটি কি ভেজাল তার দিকে না চাও।
মাতাল হলেই বেরুবে কথা মহারাজের ভয়,
শর্ত তাই মহারাজের – কেও মাতাল যেন না হয়।
যাবে না বলা কোন কথা ভেজাল বিষয় নিয়ে,
মহারাজ সোজা মানুষ বলে শর্ত দিয়ে।
সাকির শরাবে সারে না যদিও মনের ব্যামো ক্ষত,
পেটে পড়লেই বেরিয়ে আসে আসল কথা যত।
শর্ত মেনে মাতাল না হওয়া পারবে না বলে কবি,
পান করা তাই ছেড়েই দেবে – ভাবে বসে এসবই।
পরক্ষণেই সব ভুলে কবি পানশালাতে যায়,
মাতাল হবে সে সুখেতে গ্লাসের ঠোঁটে চুমু খায়।
মাতাল হলে বেরোয় কথা, সত্য যা আছে,
থাকে না ভয় মহারাজ দণ্ড দেন পাছে।
Post a Comment